হজ্জ একটি ফরজ এবাদত এবং মুসলমানদের সবচেয়ে বড় বিশ্ব সম্মেলন। মহানবী সঃ এর বিদায় হজ্জ থেকে শুরু করে প্রতি বছর এই বিশ্ব সম্মেলন হয়ে আসছে।
![]() |
হজ্জ কি ও কেন? |
হজ্জ পালন
কেন হজ্জ পালন করতে হবেঃ
হজ্জ পালনের উদ্দেশ্য দুটি। ১। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি,
২। বিশ্ব মুসলিমদের মহা সম্মেলন।
এই ২টি উদ্দেশ্যের জন্য আমরা ২টি কাজ করি।
(ক) তাওয়াফ করিঃ
আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমরা তাওয়াফ করি।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, সূরা আল ইমরান আয়াত: ৯৭,
وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلْبَيْتِ مَنِ ٱسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا
অর্থঃ এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ ঘর পর্যন্ত পৌছার।
(খ) আরাফাতে ময়দানে উপস্থিত হইঃ
বিশ্ব মুসলিমদের মহা সম্মেলনের উদ্দেশ্যে আমরা আরাফাতে ময়দানে উপস্থিত হই।
মহানবী সঃ বলেন,
عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ يَعْمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الْحَجُّ عَرَفَاتٌ الْحَجُّ عَرَفَاتٌ الْحَجُّ عَرَفَاتٌ
আবদুর রাহমান ইবনু ইয়া’মার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ হাজ্জ হচ্ছে আরাফাতে অবস্থান, হাজ্জ হচ্ছে আরাফাতে অবস্থান, হাজ্জ হচ্ছে আরাফাতে অবস্থান।
[জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৯৭৫
আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ]
عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ يَعْمُرَ الدِّيلِيَّ، قَالَ شَهِدْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ وَهُوَ وَاقِفٌ بِعَرَفَةَ وَأَتَاهُ نَاسٌ مِنْ أَهْلِ نَجْدٍ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ الْحَجُّ قَالَ " الْحَجُّ عَرَفَةُ فَمَنْ جَاءَ قَبْلَ صَلاَةِ الْفَجْرِ لَيْلَةَ جَمْعٍ فَقَدْ تَمَّ حَجُّهُ
আবদুর রহমান বিন ইয়া'মার আদ-দীলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি রাসূল (সাঃ) এর আরাফাতে উপস্থিতকালে তাঁর নিকট উপস্থিত ছিলাম। নাজদ এলাকার কতক লোক তাঁর নিকট হাযির হয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! হজ্জ কিভাবে সম্পন্ন হয়? তিনি বলেন: "আরাফাতে অবস্থান হচ্ছে হজ্জ"। অতএব যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাতে ফজর সলাতের পূর্বেই আরাফাতে এসে পৌঁছলো তার হজ্জ পূর্ণ হলো।
[সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩০১৫]
সুতরাং আমরা বলতে পারি, হজ্জ বিশ্ব মুসলিমের রাজনৈতিক সম্মেলন। আর তা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের মাধ্যম।
কিন্তু এখন আমরা হজ্জকে শুধু আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের মাধ্যম বানিয়ে ফেলেছি। ফলে হজ্জের উদ্দেশ্য আংশিক পালন হচ্ছে। যা মহানবী সঃ এর পবিত্র সুন্নত বিরোধী কাজ।
আরাফাতের ময়দানে বক্তৃতা কে দিবেন?
ক) রাসূল সঃ ও খোলাফায়ে রাশেদার যুগে বক্তৃতাঃ
বিদায় হজ্জে আরাফাতের ময়দানে খুতবা বা বক্তৃতা দিয়েছিলেন মহানবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সঃ। তিনি ছিলেন, তখনকার মুসলিম জাহানের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক নেতা। এরপরে কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচিত হন আবু বকর রাঃ।তিনি তাঁর শাসনামলে হজ্জের সময় বক্তৃতা বা খুতবা দিতেন। এভাবে ওমর রাঃ, ওসমান রাঃ এবং আলী রাঃ তাদের শাসনামলে প্রতি বছর তাঁরা নিজেরা বক্তৃতা করতেন। তাঁরা ছিলেন সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত মহানবী সঃ এর দেখানো পথে।
খ) আজকাল বক্তৃতা করেনঃ
রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হতে হতে বক্তৃতা সিস্টেমেও পরিবর্তন হতে হতে আজ
নির্দিষ্ট একটা দেশের সরকারি কর্মচারী হজ্জে বক্তৃতা দেন। এটা পবিত্র
সুন্নতের পরিপন্থী। সুন্নত নিয়ম হল, যিনি মুসলিমদের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক
নেতা নির্বাচিত হবেন, তিনিই আরাফাতের ময়দানে ভাষণ বা বক্তৃতা দিবেন ও
হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা পরিচালনা করবেন।
এখন আর মুসলিম জাহানের সেই ধরণের কেন্দ্রীয় নেতা খলিফা বা প্রতিনিধির কথা শুনা যায় না।
গ) OIC গঠিত হবার পরঃ
এখন
মুসলমানদের সেই ধরণের কেন্দ্রীয় নেতা না হলেও OIC এর মহাসচিবকে বর্তমান
মুসলিম জাহানের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক নেতা বলা চলে। হজ্জের খোতবা বা
বক্তৃতা তিনিই তো দেয়ার কথা। তিনি মুসলিম জনগণকে কিভাবে পুনরায় খোলফায়ে
রাশেদার পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা যায় তার দিক নির্দেশনা দিবেন, হজ্জের এই বিশ্ব
মুসলিম সম্মেলনে, তার খোতবার মাধ্যমে। তাহলেই মুসলমানদের এই হজ্জ প্রকৃত
হজ্জের মর্যাদা পাবে। আর মুসলমানেরা পাবে সকল প্রকার জুলুম - নির্যাতন হতে
মুক্তির দিশা।
ঘ) মুসলমানদের প্রশাসনিক কেন্দ্র বা রাজধানীঃ
যখন যে দেশের প্রেসিডেন্ট মুসলিম জাহানের নেতা বা OICএর মহাসচিব নির্বাচিত হবেন, তখন তাঁর দেশের রাজধানী ততদিনের জন্য প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসাবে গণ্য হবে। যেমন মহানবী সঃ এর আমলে মদীনা ছিল প্রশাসনিক কেন্দ্র। আলী রাঃ এর সময়ে কুফা ছিল প্রশাসনিক কেন্দ্র। আমিরে মুয়াবিয়া সময়ে দামেস্ক ছিল প্রশাসনিক কেন্দ্র। আব্বাসিয় শাসনামলে প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল বাগদাদ।
শেষেকথা, হজ্জ একটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক এবাদত। এটা মুসলমানদের বাৎসরিক রাজনৈতিক সম্মেলন। এই সম্মেলনে সুন্নাহ মতে, আরাফাতের ময়দানে বক্তৃতা দিবেন মুসলিম জাহানের রাজনৈতিক নেতা।
হজ্জ রাসুল সঃ এর সুন্নত মত না হলে, সেই হজ্জ বাতিল হিসাবে গণ্য হবে। যা দুনিয়া ও আখেরাতে মুসলমানদের কোন কল্যাণেই আসবে না।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পরিপূর্ণ হজ্জ পালন করার তৌফিক দান করুন- আমিন।
0 মন্তব্যসমূহ