আমরা যেসব কাজ করি, তা হয়, জায়েজ অথবা নাজায়েজ অথবা বিদয়াত অথবা শির্ক হয়ে থাকে। এগুলো সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরী।
![]() |
জায়েজ, নাজায়েজ ও বিদয়াত কি ও কিভাবে? |
জায়েজ, নাজায়েজ ও বিদয়াত
জায়েজঃ
১। যে কাজ করতে কোরআন-হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে, তা ব্যতীত সব কাজই জায়েজ।
যেমনঃ জন্মদিন, মৃত্যুদিন, মৃত ব্যক্তির ৩দিনা,৪০শা পালন করা উপলক্ষ্যে লোকজন খাওয়ানো [লোকজন খাওয়ানো উত্তম কাজ। -বুখারী] ও ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করা ইত্যাদি যা খুশি করা জায়েজ। যেহেতু এইগুলো কোরআন- হাদীস দ্বারা নিষিদ্ধ নয়, তাই এইগুলো জায়েজ।
২। নিষিদ্ধ কাজ বাদে বাকী সব কাজ জায়েজ, এ ব্যাপারে প্রায় সব আলেম একমত।
৩। সরাসরি কোরআন-হাদীসের আদেশ বা নিষেধ বিরোধী কাজ করা বড় গুনাহ। আর বড় গুনাহ ছাড়া বাকী সব অপরাধ মাপ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ক) "যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গোনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পার। তবে আমি তোমাদের ক্রটি-বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দেব এবং সম্মান জনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব।" সূরা আন নিসা,আয়াত-৩১।
খ) "আপনি বলে দিনঃ আমার পালনকর্তা কেবলমাত্র অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং হারাম করেছেন অন্যায়, অবৈধ ভাবে সীমা লংঘন, আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে অংশীদার করা, তিনি যার কোন সনদ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা, যা তোমরা জান না।" সূরা আল আরাফ, আয়াত: ৩৩।
(কোন কাজে এই আয়াতে বর্ণিত ৫টি শর্তের কোনটাই পাওয়া নাগেলে তা জায়েজ।)
৪। কোন জায়েজ কাজ, তা রাসূল সঃ ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম করুক বা না করুক তা করা জায়েজ।
যেমনঃ কোন লোকের রোজ সকালে ফজর নামাজে সূরা আদ-দোহা পাঠ করা ও সকালে অফিসে যেতে ১০টাকা ফকিরকে দেয়া ইত্যাদি কাজ করা জায়েজ । এমন কাজ রাসূল সঃ ও সাহাবা কেরাম করেছেন, তার কোন প্রমাণ নাই। কিন্তু তা করা জায়েজ।
জায়েজ কাজ ৫ প্রকারঃ ১। ফরজ ২। ওয়াজিব ৩। সুন্নত ৪। মোস্তাহাব ৫। মোবাহ।
নাজায়েজ বা হারামঃ
১। যা কোরআন-হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে, তা নাজায়েজ বা হারাম। যেমনঃ গিবত করা, মিথ্যা কথা বলা ও আমানতের খেয়ানত করা, ওজনে কম দেয়া ইত্যাদি কাজ করা নাজায়েজ বা হারাম।
২। রাসূল সঃ ও খোলাফায়ে রাসেদার সময় যে কাজ যেভাবে করা হতো, তা সে ভাবে নাকরে, অন্য কোন ভাবে করা নাজায়েজ বা হারাম।
যেমনঃ যাকাত রাষ্ট্রীয় ভাবে আদায় করা হতো, তা নাকরে ব্যক্তিগত ভাবে আদায় করা নাজায়েজ বা হারাম।(ব্যক্তিগত ভাবে যা দান করা হয়, তা সবই সদাকাহ, যাকাত নয়।)
সেই সময়, যাকাত বলা হতোঃ "ধনীদের সম্পদের একটা নির্ধারিত অংশ রাষ্ট্রীয় ভাবে আদায় করে বাইতুল মালে জমা করাকে যাকাত বলে।"
আর এখন যাকাত বলা হয়ঃ"ধনীদের সম্পদের একটা নির্ধারিত অংশ বছর শেষে দরিদ্রদের দান করাকে যাকাত বলে।" এখনকার পদ্ধতিতে আপনি যাকাত দিতে পারেন, কিন্তু নবীর তরিকায় আদায় হল না। আর নবীর তরিকায় আদায় নাকরা নাজায়েজ।
বিদয়াতঃ
১। কোন কাজ জায়েজ, কিন্তু রাসূল সঃ করেন নাই, সাহাবায়ে কেরামও করেন নাই, তা সুন্নত মনে করে করা বিদয়াত।
যেমনঃ মৃত ব্যক্তির ৩দিনা ও ৪০শা পালন করা,জন্মদিন পালন করা উপলক্ষে লোকজনদের খাওয়ানো জায়েজ, কিন্তু সুন্নত মনে করে করা বিদয়াত। আবার পায়ের উপর পা তুলে জিকির করা জায়েজ, কিন্তু তা সুন্নত মনে করে করা বিদয়াত।
২। রাসূল সঃ ও খোলাফায়ে রাসেদার যুগে যে কাজ যেভাবে করা হয়েছে, তা সেভাবে নাকরে নতুন কোন ভাবে করা বিদয়াত। যেমনঃ
(ক) যাকাত রাষ্ট্রীয় ভাবে আদায় করা হতো, তা না করে নতুন নিয়মে ব্যক্তিগত আদায় করা বিদয়াত।
(খ) সমাজের ইমামের পেছনে নামাজ পড়া হতো,তা না পড়ে, নতুন নিয়মে ভাড়া করা লোকের পেছনে নামাজ পড়া বিদয়াত।
(গ) হজ্বের সময় মুসলিম জাহানের নেতা আরাফার ময়দানে বক্তৃতা করতো, বর্তমানে OIC এর মহাসচিব মুসলিম জাহানের নেতা। নতুন নিয়মে তিনি আরাফাতের ময়দানে বক্তৃতা নাদেয়া বিদয়াত।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিকটা জানা, বুঝা ও মেনে চলার তৌফিক দান করুন- আমিন।
0 মন্তব্যসমূহ