ইসলাম মানে শান্তি। যে দেশের জনগণ শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে শান্তিতে বসবাস করে সেটাই ইসলামী রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের কার্যক্রম আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের আদর্শ অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
![]() |
ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে কি কি হবে? |
রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে যে পরিবর্তন হবে
ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে,দেশ একটি কল্যাণময় রাষ্ট্রে পরিণত হবে। যেমনঃ
১। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসা, বিনোদন ও নিরাপত্তা ইত্যাদি দেয়ার দায়িত্ব সরকার নিবে। যেমনঃ হযরত ওমর রাঃ বলেছিলেন, "ফোরাত নদীর তীরে একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায় তাহলে এই ওমরকে কাল কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট জবাব দিতে হবে।"
২। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, সকল নাগরিকদের শিক্ষা, চিকিৎসা, বিচার ও নিরাপত্তা ফ্রি দেয়া হবে।
৩। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, সকল নাগরিকদের সুযোগ সুবিধা রাষ্ট্র প্রধানের সমান দেয়া হবে।
৪। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, জাতীয় মসজিদের ইমাম ও খতিবের চাকরি চলে যাবে। কারণ, রাষ্ট্র প্রধান সেই স্থানে চলে যাবেন। অনুরূপ ভাবে জেলা প্রশাসক নামাজ পড়াবে জেলার কেন্দ্রীয় মসজিদে।
৫। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, রাষ্ট্র প্রধান নামাজ শেষে জনগণের সমস্যা শুনবেন ও তার সমাধান করবেন।
৬। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, প্রশাসনিক ব্যয় বর্তমানের ৮০% কমে যাবে। কারণ
রাজধানীতে রাষ্ট্র প্রধান আর জেলায়, জেলা প্রশাসকের নীচে কোন প্রশাসনিক পদ নাই ইসলামে। সাথে ছোট খাট একটা মন্ত্রীপরিষদ আরও দুটি আইন সভা থাকবে ১। মতামত সভা এটাকে মজলিসে আম বা নিম্ন কক্ষ বলা যায়। ২। পরামর্শ সভা এটাকে মজলিসে শুরা বা খাস বা উচ্চ কক্ষ বলা যায়।
৭। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে,
রাষ্ট্রের রাজস্ব আয়ের উৎসসমূহ হবেঃ
১। যাকাত, ২। উশর, ৩। খারাজ, ৪। সাদাকাতুল ফিতর, ৫। ওয়াকফ, ৬। আমওয়াল আল ফাদিল বা অতিরিক্ত মাল, ৭।জরুরী কর, ৮। দান, ৯। গনিমত , ১০। খুমুস, ১১। ফাই, ১২। মুক্তিপণ, ১৩। কর্জ, ১৪। উপহার সামগ্রী, ১৫। জিযিয়া, ১৬। মালিকানাহীন সম্পদ,১৭। একাধিকারভুক্ত ব্যবসায়ের কর, ১৮। জলজ সম্পদ, ১৯। বনজ সম্পদ।
এগুলো থেকে রাসূল সঃ ও খোলাফায়ে রাশেদার আমলে রাজস্ব আদায় করা হতো। এই নিয়ম আব্বাসিয় খিলাফতকালের শেষ দিন পর্যন্ত চালু ছিল। এদের মধ্যে শুধু যাকাত ও উশরের মাধ্যমে ৯০% পর্যন্ত রাজস্ব আদায় করা হতো। আর,
রাজস্ব বা বাইতুল মালের ব্যয়ের খাতসমূহ হবেঃ
১। বেতন ও ভাতা প্রদান, ২। দারিদ্র্য বিমোচন, ৩। দাসত্ব মোচন, ৪। ঋণমুক্তি, ৫। রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কাজে, ৬। রাস্তা -ঘাট ও পুল নির্মাণ, ৭। জনকল্যাণমুলক কার্যাবলি, ৮। প্রতিরক্ষা, ৯। কর্মসংস্থান, ১০। সুদমুক্ত কৃষিঋণ, ১১। ইসলাম প্রচার-প্রসার।
এই খাতগুলোতে রাজস্ব ব্যয় করা হতো, রাসূল সঃ ও খোলাফায়ে রাশেদা সহ উমাইয়া ও আব্বাসিয় খেলাফত কালের শেষ দিন পর্যন্ত মোট ছয় শত বছরের বেশি সময় ধরে।
৮। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, খাদ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা হবে এবং খাদ্যে ভেজাল দেয়া বন্ধ হয়ে যাবে।
৯। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, পাপ কাজ করা বন্ধ হয়ে যাবে। যেমন, সুদ, ঘুষ, ওয়াদা খেলাফ করা, মিথ্যা কথা বলা, প্রতারণা করা, ইভটিজিং করা ইত্যাদি।
১০। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, সকল ক্ষেত্রে নিয়ম ও শৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হবে। ফলে, দুর্নীতি, যানজট ইত্যাদি সমস্যা ম্যাজিকের মতো দূর হয়ে যাবে।
১১। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, সর্বত্র গণতন্ত্রে চর্চা পরিলক্ষিত হবে। আর মত প্রকাশের স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
১২। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, বেতন বৈষম্য ১ঃ২ এ নামিয়ে আনা হবে। যা রাসূল সঃ ও খোলাফায়ে রাশেদার আমলে ছিল। *বিস্তারিতঃ
১৩। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, সকল কাজ কোরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক পরিচালিত হবে।
১৪। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, বিচারপতি বাদী-বিবাদী উভয়ের কথা সরাসরি শুনে কোরআন-হাদীস অনুযায়ী, বিচার ফায়সালা করবেন। *বিস্তারিতঃ
১৫। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। *বিস্তারিতঃ কারণ,
ক) পবিত্র কোরআনে গরীব মানুষের বিবাহ নিষেধ করা হয়েছে।-সূরা নূর-৩৩। যেমনঃ আবু হুরায়রা রাঃ দারিদ্রতা কারণে রাসূল সঃ এর যুগে বিবাহ করার অনুমতি পায়নি। তিনি রাসূল সঃ এর সাথে টানা ৩ বছর কাটিয়েছেন।
খ) পবিত্র কোরআনে, শিশুর অধিকারের কথা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। *বিস্তারিতঃ
১৬। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, সরকার ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে।
১৭। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, শাসকগোষ্ঠী সাধারণ জনগণের মত জীবন-যাপন করবেন। যেমন, রাসূল সঃ ও খোলাফায়ে রাশেদাগণ সাধারণ জীবন যাপন করেছেন।
১৮। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, জনগণ শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে প্রশান্তিতে জীবন যাপন করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ক)সূরা আল আরাফ (الأعراف), আয়াত: ৯৬
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ ٱلْقُرَىٰٓ ءَامَنُوا۟ وَٱتَّقَوْا۟ لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَٰتٍ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ وَلَٰكِن كَذَّبُوا۟ فَأَخَذْنَٰهُم بِمَا كَانُوا۟ يَكْسِبُونَ
অর্থঃআর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে।
খ)সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ৬৬
وَلَوْ أَنَّهُمْ أَقَامُوا۟ ٱلتَّوْرَىٰةَ وَٱلْإِنجِيلَ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْهِم مِّن رَّبِّهِمْ لَأَكَلُوا۟ مِن فَوْقِهِمْ وَمِن تَحْتِ أَرْجُلِهِم مِّنْهُمْ أُمَّةٌ مُّقْتَصِدَةٌ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ سَآءَ مَا يَعْمَلُونَ
অর্থঃযদি তারা তওরাত, ইঞ্জিল এবং যা প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, পুরোপুরি পালন করত, তবে তারা উপর থেকে এবং পায়ের নীচ থেকে ভক্ষণ করত। তাদের কিছুসংখ্যক লোক সৎপথের অনুগামী এবং অনেকেই মন্দ কাজ করে যাচ্ছে।
১৯। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, জনগণ শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে প্রশান্তিতে জীবন যাপন করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ক)সূরা আল আরাফ (الأعراف), আয়াত: ৯৬
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ ٱلْقُرَىٰٓ ءَامَنُوا۟ وَٱتَّقَوْا۟ لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَٰتٍ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ وَلَٰكِن كَذَّبُوا۟ فَأَخَذْنَٰهُم بِمَا كَانُوا۟ يَكْسِبُونَ
অর্থঃআর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে।
খ)সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ৬৬
وَلَوْ أَنَّهُمْ أَقَامُوا۟ ٱلتَّوْرَىٰةَ وَٱلْإِنجِيلَ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْهِم مِّن رَّبِّهِمْ لَأَكَلُوا۟ مِن فَوْقِهِمْ وَمِن تَحْتِ أَرْجُلِهِم مِّنْهُمْ أُمَّةٌ مُّقْتَصِدَةٌ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ سَآءَ مَا يَعْمَلُونَ
অর্থঃযদি তারা তওরাত, ইঞ্জিল এবং যা প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, পুরোপুরি পালন করত, তবে তারা উপর থেকে এবং পায়ের নীচ থেকে ভক্ষণ করত। তাদের কিছুসংখ্যক লোক সৎপথের অনুগামী এবং অনেকেই মন্দ কাজ করে যাচ্ছে।
২০। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে,হজ্জ ছাড়া বাৎসরিক ওয়াজ মাহফিল বন্ধ হয়ে যাবে। হজ্জ পরিচালনা করবেন মুসলিম দেশগুলোর ভোটে নির্বাচিত খলিফা বা মহাসচিব। বর্তমানে OIC মহাসচিবকে নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতা, মহাসচিব বা খলিফা বলা যায়। তিনি তার দেশের শাসন কার্য পরিচালনা করবেন আবার হজ্জের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন ও আরাফাতের ময়দানে বক্তৃতাও দিবেন।
আর অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপতি রাজধানীর কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রতি শুক্রবার ওয়াজ বা বক্তৃতা করবেন। আর জেলায়, জেলা প্রশাসক জেলার কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রতি শুক্রবার ওয়াজ বা বক্তৃতা করবেন। রাসূল সঃ ও খোলাফায়ে রাশেদা রাঃ এই পদ্ধতিতে হজ্জ, ওয়াজ মাহফিল ও রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন।
ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে, রাষ্ট্র প্রধান অথবা তার প্রতিনিধি বা অনুমোদিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেহ জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে পারবে না।
এসম্পর্কে রাসূল সঃ বলেন,
عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الأَشْجَعِيِّ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " لاَ يَقُصُّ إِلاَّ أَمِيرٌ أَوْ مَأْمُورٌ أَوْ مُخْتَالٌ "
আওফ ইনবু মালিক আল-আশাজাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাঃ)–কে বলতে শুনেছিঃ শাসক,অথবা তার অধীনস্ত ব্যক্তি অথবা কোন অহংকারী ব্যতীত আর কেউই কিস্সা বর্ণনা বা বক্তৃতা করে না।
[সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৬৬৫, আল হাদীস app থেকে।]
সুতরাং আমরা বলতে পারি, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে, দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা পরিপূর্ণ ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। আর বেকারত্ব ও অপরাধ প্রবনতা পরিপূর্ণ ভাবে দূরীভূত হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের দেশকে পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার তৌফিক দান করুন আমিন।
১।সূত্রঃ পবিত্র কোরআন, হাদীস শরীফ ও ইসলামের ইতিহাস।
২।সূত্রঃ (ক) ইসলামের রাষ্ট্রব্যবস্থা,লেখকঃ মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম,(ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়) পৃষ্ঠা-৩৩০, আহসান পাবলিকেশন।
(খ) ইসলামিক স্টাডিজ, লেখকঃ এম.এ.ছালাম, অবিস্মরনীয় প্রকাশনী।
0 মন্তব্যসমূহ